সুনামগঞ্জ , শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ , ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রুট পাল্টে নৌপথে সক্রিয় চোরাকারবারিরা প্রশাসনের জব্দকৃত বালুভর্তি বাল্কহেড উধাও! তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় হাওরে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দাবি নারীনেত্রী দিপালী চক্রবর্তী’র ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ভারী বর্ষণ ও ঢলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বড় বন্যার আশঙ্কা নেই সাবেক প্রেমিকাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের পর আত্মহত্যার চেষ্টা ছাত্রলীগ নেতার রঙ্গারচরে ভিজিএফ কর্মসূচির চাল বিতরণ জেলা প্রশাসনের অনন্য উদ্যোগ : সবুজের সন্ধানে নতুন যাত্রা দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন : তারেক রহমান গণতন্ত্র পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে : খালেদা জিয়া তাহিরপুরের ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই জনবল সংকট, চরম ভোগান্তিতে মানুষ সুনামগঞ্জসহ ৬ জেলায় বন্যার শঙ্কা দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ এবার সুনামগঞ্জ সীমান্তে ১৬ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ : সতর্ক অবস্থানে বিজিবি ঠিকাদারের দখলে বিদ্যালয়ের মাঠ, প্রায় তিন বছর ধরে খেলাধুলা বন্ধ সুনামগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়ন ও সংস্কারে নানা উদ্যোগ গৃহীত সহকারী শিক্ষকের নানা ‘অপকর্মের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ দোয়ারাবাজার সীমান্তে ৩ অনুপ্রবেশকারী আটক ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উদ্যোগে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন

নজরুল জন্মেছিলেন আমাদের জন্য

  • আপলোড সময় : ২৪-০৫-২০২৫ ১০:৫৪:৩৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০৫-২০২৫ ১১:৫৩:১৩ অপরাহ্ন
নজরুল জন্মেছিলেন আমাদের জন্য
মোহাম্মদ আব্দুল হক::
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি, যিনি ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসেবেই অধিক পরিচিত।
এর প্রধান কারণ তাঁর বিদ্রোহী নামক অসাধারণ কবিতা। শুধু তাই নয়, তিনি সমকালীন সমাজের অত্যাচার-নির্যাতনের ও অবিচারের বিরুদ্ধে অনেক কবিতা গান ও গদ্য রচনা করেছেন, যা তাঁকে ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। কবি জন্মেছিলেন পরাধীন ভারতে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখে খুব বেশি কিছু উপস্থাপন করা যাবে না। তবু কবি নজরুলকে নিয়ে আমাদের প্রয়োজনেই কিছুটা আলোকপাত করা দরকার । স্কুলে পড়াকালীন কাজী নজরুল ইসলাম সৈনিক হিসেবে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দুঃশাসনে পরাধীন এদেশের মানুষ যখন চরমভাবে নিপীড়িত, নির্যাতিত এবং পাশাপাশি সেই পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্যে মানুষ যখন স্বাধীনতার আন্দোলন করছিল সেই সময়েই কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব ঘটে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় ওই সময়ে কবির ‘বিদ্রোহী’, ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘খেয়া পারের তরণী’ ইত্যাদি কবিতা এবং ‘শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল পরার ছল’ কিংবা ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ প্রভৃতি তেজোদীপ্ত গান তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সৈনিকদের যেমন উজ্জীবিত করেছে তেমনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশমাতৃকার মুক্তিসংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে অনুপ্রাণিত করেছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে কবির জীবনের বিদ্রোহী দিকটি নিয়ে আলোচনা করেই বহুদূর যাওয়া যাবে। বিদ্রোহী কবিতায় কবি বলেছেন- “বল বীর চির উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!” এখানে দেখতে পাওয়া যায় অপরাজেয় কবি শির উন্নত রেখে সমস্ত মানব জাতিকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন। ঠিক এখানটিতে থেমে যদি আমরা বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করি, কী দেখতে পাই? আমরা দেখি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হুকুম দেয়া হয় ‘যুব সমাজ তোমরা ঝাঁপিয়ে পড়’। অথচ মানবাধিকার আন্দোলন সহ নানান সামাজিক কর্মকা-ের নেতৃত্বে থেকে নিজে শির উঁচু করে সামনে আসতে অনেক নেতাই যেন ভয়ে ভীত। এভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল হতে পারে না। আর এমন কূপমন্ডুকতা ঝেড়ে ফেলে না দিলে জঙ্গীরা সুযোগ নিয়ে বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, আমাদের সমাজে অঘটন ঘটিয়ে যাবে সব সময়। তাই নজরুলকে ধারণ করলে বিদ্রোহী নজরুলের তেজ নিয়েই এগুতে হবে চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে। আসুন এবার নজরুলের সাহিত্য সৃষ্টি নিয়ে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করি। কবির সাহিত্যিক জীবন ছিলো খুব স্বল্প সময়ের (১৯১৯-১৯৪২ খ্রীষ্টিয় সাল)। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্য সংশ্লিষ্ট জীবনে কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রায় তিন হাজারের (মতান্তরে চার হাজার) অধিক গান রচনা করেছেন। এছাড়া তাঁর রচিত কবিতার সংখ্যা অসংখ্য। এখানে বলে রাখি অনেকের মতে তাঁর লেখা কবিতার মধ্যে এই লেখার শুরুতে উল্লিখিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বিশ্ব সাহিত্যে অতুলনীয়। কবি গল্প লিখেছেন ১৯টি। অথচ নজরুল প্রেমিকদের কেউ কেউ লিখেছেন নজরুলের গল্প সংখ্যা ষোল-সতের। আমি বুঝি না নজরুল বিষয়ে কেন এতটা উদাসীনতা। এখানে বলে রাখি প্রকৃত অর্থে কাজী নজরুল ইসলামের প্রকাশিত ছোট গল্পের তিনটি বই- ব্যথার দান, রিক্তের বেদন ও শিউলীমালাতে মোট ১৮টি গল্প ছাপা হয়। কিন্তু ‘বনের পাপিয়া’ নামে কবির একটি ছোট গল্প আছে যা কোনো গল্প গ্রন্থে প্রকাশিত হয়নি। অবশ্য পরবর্তীতে নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘নজরুলের ছোট গল্প সমগ্র’-তে ‘বনের পাপিয়া’ সংযোজিত হয়েছে। যারা নজরুলের গল্প পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই প্রেমিক নজরুলকে খুঁজে পেয়েছেন। কবির লেখা গল্পগুলো পড়লে মনে হবে যেন প্রতিটি গল্পেই একেকজন নজরুলের বসবাস। কখনো নজরুলকে প্রেমিক আবার সেই প্রেমিক নজরুলই হয়ে উঠেন কর্তব্য পরায়ণ সৈনিক। এতো গেলো গল্পের কথা। পাশাপাশি একথা সর্বজনে জানা কবিতায় শ্রেষ্ঠত্বের কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর কাব্যগ্রন্থ হল অগ্নিবীণা, সর্বহারা, ফণীমনসা প্রভৃতি। তবে কবিতা ও গান ছাড়া তিনি ৩টি উপন্যাস এবং ঝিলমিল ও আলেয়া’ নামে নাটক লিখেছেন। কবি প্রচুর ইসলামী ভাবধারার সঙ্গীত রচনা করেছেন। নজরুলের বিখ্যাত গান ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ এই গানটি ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। এসব কিছুর বাইরে নজরুল বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন এবং দূরভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। তিনি লেখেন, ‘বিশ্বজগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।’ তাঁর এ লেখার বাস্তবায়ন আজ ঘটছে। আর এভাবেই তাঁর হাত ধরে আমাদের কাব্যসাহিত্য এখন যথেষ্ট সম্প্রসারিত। এরই ধারবাহিকতা এখন চলছে। কবি নজরুলের ছিলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা। জাতিতে জাতিতে ভেদাভেদ আর হিন্দু মুসলমানদের সম্প্রদায়গত বিভেদকে তিনি ঠেলে রেখেছেন দূরে। অথচ আজও সেই নজরুলের বাংলায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বিভেদের ভয়ংকর খেলা চলে। তাই আজ কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মরণে কবির সেই বিখ্যাত কথা স্মরণ করা সমীচীন- “এক সে দেশের মাটিতে পাই, কেউ গোরে কেউ শ্মশানে ঠাঁই, এক ভাষাতে মাকে ডাকি, এক সুরে গান গাই।” এ কথাই সত্য হোক আমাদের কাছে। আজ চারিদিকের অন্যায়, ঘুষ, দুর্নীতিকে রুখতে নজরুলের বড় প্রয়োজন । সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এই হচ্ছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কবি কাজী নজরুল ইসলামের অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

[লেখক : মোহাম্মদ আব্দুল হক, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
রুট পাল্টে নৌপথে সক্রিয় চোরাকারবারিরা

রুট পাল্টে নৌপথে সক্রিয় চোরাকারবারিরা